প্রতিবছরই মধুমতি নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে যেমন ভাঙনের কবলে পড়তে হয় নদীপাড়ে বসবাসরত বাসিন্দাদের ঠিক তেমনি পানি কমতে শুরু করলে ভাঙনের ভয়াবহতা আরও বাড়তে থাকে। পৈতৃক সম্পত্তি ছেড়ে অনেকের চলে যেতে হয় অন্যত্র, আবার অনেককেই আশ্রয় নিতে হয় সরকারি আশ্রয়ণে। কিছুদিন পূর্বেই পানি কমতে শুরু করায় আবারো মধুমতি নদীর ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে করে একদিকে যেমন ভূমিহীনদের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে উপজেলার মানচিত্র থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ১৪ গ্রাম। উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাশিপুর, ধুলজুড়ী, মুরাইল, রায়পাশা, ভোলানাথপুর, পাচুড়িয়া, রুইজান গোপালনগর, জাঙ্গালীয়া, পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের ঝামা, আড়মাঝি, দেউলী, যশোবন্তপুর, কালিশংকরপুর গ্রামগুলো তীব্র ভাঙনকবলিত। এসব এলাকার নদী তীরের অসংখ্য ঘরবাড়ি, আবাদী জমি, গাছপালা, মসজিদ ও গোরস্থান ইতিমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গতকাল সরজমিন হরেকৃষ্ণপুর এলাকায় নদী ভাঙন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানি কমতে শুরু করায় লোকজন দ্রুত কাঁচা-পাকা বাড়িঘরসহ প্রয়োজনীয় মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। বিক্রি করে দিচ্ছেন গাছপালা। চোখের সামনে ভিটেবাড়ি মধুমতিতে বিলীন হয়ে যেতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। দিশাহারা হয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন তারা।
খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদী তীরে বসবাসকারী মানুষ। হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের প্রবীণ শাহাদৎ শেখ বলেন, পৈত্রিক ভিটায় করা ঘরবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়ে তিনি আজ নিঃস্ব। একমাত্র মাথা গোঁজার জায়গাটুকু ছিল সেটি এখন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থায়ী কোনো সমাধান যদি সরকার না করে তাহলে হয়তো ভাঙনের কবল থেকে জনসাধারণের জায়গাজমি আর রক্ষা করা সম্ভব হবে না। আমাদের এলাকার অনেকেই ভূমিহীন হয়ে পড়েছে।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান সরোয়ার জাহান সুজন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল মানবজমিনকে বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি নিয়ে সরজমিন পরিদর্শনপূর্বক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।