দুর্নীতির বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, এটা অনস্বীকার্য যে, এটা আমাদের জাতীয় ব্যাধি। দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করছে।
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটোরিয়ামে বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ সভার আয়োজন করে।
দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন- দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক, দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমার সবচেয়ে কষ্ট হয়, যখন দেখি দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনের পর রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়ে কিছ– কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়। দেশের বিদ্যান ব্যক্তিরা লোভের পেছনে ছুটলে, ঐশ্বর্যের পেছনে ছুটলে, অসাধু হলে দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করা কখনো সম্ভব হবে না। টাকা হলে সবকিছু সম্ভব- এ ধারণাকে চিরতরে মুছে দেওয়ার জন্য আমাদের সবার নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি নবীন ছেলেমেয়েদের উদ্দেশে বলছি, তারা তাদের পিতামাতার কাছে বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাইবে যে, তাদের পিতামাতার বেতন-ভাতা কত? তাদের মাসিক আয় কত, মাসিক ব্যয় কত? তাদের সংসার কীভাবে চলে, তারা কীভাবে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করে।’ তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বর্জন করতে হবে। তরুণ প্রজন্ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হতে বাধ্য।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমরা শৈশবে দেখেছি, দুর্নীতিবাজদের সমাজ থেকে বয়কট করা হতো। তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করতে সংকোচ বোধ করা হতো। বরং এখন তাদের উৎসাহিত করা হয়। দুর্নীতিবাজদের তোষণ করা হয়। আমাদের পূর্বের কালচারে ফিরে যেতে হবে।’
‘আপনার অধিকার, আপনার দায়িত্ব : দুর্নীতিকে না বলুন’ এ প্রতিপাদ্যে দেশব্যাপী বৃহস্পতিবার দিবসটি উদযাপন করেছে দুদক। জাতিসংঘ ২০০৩ সালে ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হিসাবে ঘোষণা করে।
২০০৭ সাল থেকে দিবসটি পালন শুরু করে দুদক। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০১৯ উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকা মহানগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, ইংলিশ রোড (পুরান ঢাকা), মিরপুর-১০, উত্তরা (বিমানবন্দর চত্বর), মতিঝিল (শাপলা চত্বর), মানিক মিয়া এভিনিউ, যাত্রাবাড়ী ও মুক্তাঙ্গণে সকালে মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে দুদক চেয়ারম্যান, দুই কমিশনারসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পিকেএসএফসহ বিভিন্ন এনজিওর সদস্যরাও অংশ নেন।