দরবার ডেস্ক :

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
দরবারী বন্ধুরা, কোথায় ? অনেককেই দেখতে পাচ্ছিনে। দরবার প্রায় খালি। মৃতু কাফেলায় যাওয়ার ভয়ে দরবার খালি ! গত অধিবেশনে ডাক দিয়েছিলাম চলো মৃত্যুর খোঁজে বের হই। মরতে যখন হবেই না মরে বেঁচে থাকা যায় ? বেঁচে থাকাটাই মিথ্যা। মৃত্যুই সত্য। সেই সত্যের খোঁজে বের হবে তারা, যারা উত্তম মৃত্যু চায়। মৃত্যু এমন একটা পর্দা, যা না সারালে চির প্রশান্তিময় মহিমান্বিত এক অনন্ত কালের সিটিজেনশীপ পাওয়ার উপায় নেই। এমন সিটিজেনশীপ তারাই পায় যারা একটা উত্তম মৃত্যু খোঁজে।
আর যারা বেঁচে থাকার মিথ্যা আশ্বাসে নিশ্বাস ত্যাগ করে তারাও অনন্ত জীবন পাবে। তবে তা পাবে উত্তপ্ত এক অগ্নি গহবরের বাসিন্দা হয়ে। আচ্ছা দরবারীরা, কল্পনা করতে পারো সেই অনন্ত কাল রাত কাল। কত কাল হিসেব যাবে না। তবে বলা যাবে যার শুরুটাই আছে শেষ নেই। পচিশ হাজার মাইল পরিধি নিয়ে এই পৃথিবী। এর চতুর্পাশ্বে মহাকাশ দ্বারা পরিবেষ্ঠিত। পৃথিবী থেকে চতুর্পাশ্বে মহাকাশ পযর্ন্ত যদি শস্যকনা দিয়ে ভর্তি করা হতো আর একটি দু’দিন নয়, প্রতি ৭০ হাজার বছর পর একটি করে পাখি এসে একটি করে শস্য দানা নিয়ে যেত তবে একদিন তা শেষ হবে। কিন্তু আখেরাতে যে জীবনটিই ভাগ্যে জুটুক না কেন তার কোনদিন শেষ হবে না। আচ্ছা সাথীরা আসমান বলতে কতদুর ? বলতে পার ? পারবে কি করে ? মুন্সিই হিমসিম খেতে যাচ্ছে। তবে একদিন বিজ্ঞানির বিশ্লেষন দিয়ে অনুমান
ধারণা করার চেষ্টা করা যেতে পারে। আমরা জানি সূর্যকে কেন্দ্র করে নয় দশটি গ্রহ। তাদের সকলকে একত্রে সৌর পরিবার বলা হয়। সূর্যের দুরবর্তী গ্রহটি সূর্য থেকে কোটি কোটি মাইল দুরে। সূর্যকে কেন্দ্র করে শেষ গ্রহটি পযর্ন্ত ব্যাসার্ধ নিয়ে যদি একটি বৃত্ত অংকন করা যায় তাহলে………? তাহলে বৃত্তটির সীমানা সম্পর্কে কেউ কল্পনা করতে পারে ! এটা কল্পনা করাই মিথ্যা। এ রকম লক্ষ লক্ষ সৌর পরিবার পাশাপাশি সাজলে যা পাওয়া যায় তা হলো ছায়াপথ। ছায়াপথ পরিস্কার আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পযর্ন্ত সাদা বিন্দু বিন্দু মেঘের মত দেখা যায়। এই রকম ত্রিশ লক্ষাধিাক ছায়াপথ একত্রিত করলে প্রথম আসমান সম্পর্কে একটু ধারণা করা যেতে পারে। এই আসমানের এক প্রান্তে বসে যদি অনবিক্ষন যন্ত্র দিয়ে দেখা যায় তাহলে সূর্য নয় ঐ বিশাল সৌর পরিবারকে একটি বিন্দুর মত দেখা যেতে পারে। এ পযর্ন্ত প্রথম আসমান। এবার শস্য দানা দিয়ে ভরে দাও। কল্পনা কর। প্রতি ৭০ হাজার বছর পর একটি পাখি যদি একটি করে শস্য দানা নিয়ে যায় তবে এ শস্য দানারও শেষ আছে। শেষ নেই শুধু অনন্তকালের। এই কালের জন্যেই উত্তম মৃতুর প্রয়োজন। তোমরা যারা পৃথিবীতে চিরদিন বেঁচে থাকার আশায় বসে আছো, তারা থাক। তাদের এমন উত্তম মৃত্যুর খোঁজে ডাকবো না। এই দেখ, লোকে বলবে ফারাজি মুন্সির আবার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষন। আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর। ওয়েট, ওয়েট আদার ব্যাপারীর দাম আছে। দু’শো টাকা আদার কেজি। তার ব্যাপারী ! কম কথা! হায় মুন্সির ভাগ্যে কি আর তা জুটবে ? তা না জুটুক একটা উত্তম মৃত্যু জুটলেই হলো। আর কিছু চাইনে। চলো দেখি কি প্রশ্ন এসেছে।
প্রশ্ন ঃ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি। কারো সংসার ভাঙ্গা আর মসজিদ ঘর ভাঙ্গা নাকি সমান। প্রকৃত প্রেম করে তাকে বিয়ে শাদী করে ঘর সংসার করলে মসজিদ ঘর রক্ষা করার সম-পরিমাণ সওয়াব কি পাওয়া যাবে না ? অনেকেই বলেন ভালোবাসার মানুষের দিকে একটু মুচকী হাসি ও ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকানো যায় তাহলে একটি মকবুল হজ্জের সওয়াব লেখা হয়। ছাত্র সমাজ-বিজ্ঞান, ইবি, কুষ্টিয়া।
উত্তর ঃ নাম যদি ছাত্র হয়, কি নামে তোমায় আমি ডাকব বল ? নাম প্রকাশ করতে সাহস হলো না। কারণ, তুমি অবৈধ প্রেম করে বিয়ে করতে চাও। অবৈধ প্রেমের নাম দিয়েছ প্রকৃত প্রেম। প্রেমের সংগা কি জান ? আরও বলতে চেয়েছ ভালবাসার মানুষটির দিকে একবার তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলে একটি মকবুল হজ্জ। একটা কাজ কর, এবার তো হজ্জ হয়েই গেল। আগামী বছর একটা “মকবুল হজ্জ এজেন্সি ” খুলে বস। টাকা পয়সা খরচ করে আর কাউকে মক্কায় যাওয়ার দরকার হবে না। ভালবাসার মানুষটির দিকে একবার তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি। ব্যাস একটা মকবুল হজ্জ। কার কতটি মকবুল হজ্জ চাই। তাদেরও মকবুল হজ্জ হলো, তোমারও টুপাইস।এবার প্রথম প্রশ্নে আসা যাক। কবি আজিজুর রহমান বলেছেন, “কারো মনে তুমি দিওনা আঘাত সে আঘাত লাগে কাবা ঘরে”। কবির বিরুদ্ধে কোন তর্কে যাব না। তবে সত্য কথা হলো, কাবা ঘরটি তৈরী করেছেন হজরত ইব্রাহীম (আঃ)। তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা অত্যান্ত কাছের মানুষ। তিনি যে ঘরটি তৈরী করেছেন তার নাম কাবা। মানুষ, মানুষের হৃদয় মন তৈরী করেছেন আল্লাহ। সেই আল্লাহর তৈরী ঘরটি ভাংগলে কাবা ভাংগার সমান হবে কেন ? তার থেকে অনেক অনেক বেশী। তাহলে কি করে ফতওয়া দিচ্ছ কারো ঘর ভাংগা আর মসজিদ ভাংগা সমান ? ঘর ভাংগা মানে স্বামী স্ত্রীর মন । পরস্পরের প্রতি ভেঙ্গে দেয়া। একাজটি শয়তান করে।
শোন ছাত্র, মানুষের স্বভাব হলো নিজের মনগড়া শরীয়ত বিরোধী কাজ তৈরী করা। সেই শরীয়ত বিরোধী কাজ গুলোকে শরীয়তের বিধানের সাথে জুড়ে দিয়ে হালাল করতে চায়। আসল বিধান হলো, শরীয়ত উৎসারিত অনুমোদিত কাজ গুলো দিয়ে জীবন শুরু করলে এবং সেই জীবনে হজ্জ করলে মকবুল হজ্জ। এর জন্যে কত টাকা পয়সা খরচ, কত কষ্ট, তারপর মকবুল হজ্জ। তা না করে একটু মুচকি হাসি দিয়ে মকবুল হজ্জ ?একটু বুঝে শুনে কথা বলতে হয়।
প্র্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি।ফারাজী মুন্সি সাহেব। ঈদের দিন কোন ব্যক্তি যদি হাত-পায়ের নখ কাটে সে নাকি কোরবানী ও হজ্জের সওয়াব পায়। আসলে এটি কি শরীয়ত ও হাদিস সম্মত জানালে খুশি হতাম। কিবরিয়া, সরকারী কলেজ, কুষ্টিয়া।
উত্তর : কিবরিয়া, তোমরা কি বে-কেতাবীই থেকে যাবে ? সরকারী কলেজে পড়। কত বই পড়েছ। ইংরেজী, বাংলা, ইতহাস, অর্থনীতি, হিসাবজ্ঞিান, অংক আরও কতকি। তারপরও কেতাবী হতে পারলে না ? কোনদিন পারবেও না। যতদিন ঐ গুলোর পাশাপাশি কোরআন আর হাদিস সংযুক্ত না করবা। হাত পায়ের নখ কাটলে যদি কুরবানী আর হজ্জের সওয়াব পাওয়া যেতো তবে ইব্রাহীম (আঃ) বসে বসে হাত পায়ের নখ কাটতেন। পুত্রের গলায় ছুরি চালাতেন না। এ বিষয়গুলি শরিয়ত আর হাদিস মোতাবেক জানতে মুন্সির কাছে প্রশ্ন করেছ। মনে হচ্ছে কুরআন হাদিস শুধু মাত্র মুন্সির। তোমাদের তা স্পর্শ করতে নেই। বোকা সারা জীবন বোকাই থেকে যায়।
প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি। কোরবানীর ফজিলত ও তাৎপর্য কি জানতে চায় ? কোরবানীর পশু নাকি হৃষ্টপুষ্ট হয় তাহলে ওই প্রাণীতে চড়ে কোরবানীদাতাকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়া হবে। খলিলুর রহমান, দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা।
উত্তর : কুরবানীর ফজিলত হলো আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ, সবই আল্লাহর জন্যে। এই ঘোষণা দেয়া হয় এই জন্যে যে, যে কোন মুহুর্তে আমি সবকিছুই আল্লাহর জন্যে ত্যাগ করতে রাজি আছি। তার নিদর্শন স্বরুপ একটি পশু কুরবানী করে আল্লাহর কাছে প্রত্যয় ব্যাক্ত করা। দ্বিতীয় কথা হলো বিরাট মোটা তাজা পশু অবৈধ ইনকাম দিয়ে ক্রয় করলে তা অবৈধ। সে পশু পিঠে করে কিন্তু জাহান্নামে নিয়ে যাবে। এরপর কথা হলো পশু মোটা তাজা নিয়ে কোন প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হলো পশুটা সুন্দর হতে হবে আর সহীহ নিয়ত আর হালাল আয় হতে হবে।
প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি। মুন্সি সাহেব মহিলারা কোরবানীর পশু জবাই করতে পারে কি ? জাহানারা, মঙ্গলবাড়ীয়া, কুষ্টিয়া।
উত্তর : মঙ্গল বাড়ীর মেয়ে। অমংগল করার চিন্তা ভাবনা আছে কি না তা কে জানে ? এতদিন পর পশু কুরবানী করার সাধ জাগল কেন? কুরবানীর পশু মহিলা সাহাবিরা জবাই করেছেন কি না তা হাদিসে পাওয়া যায় না। আবার নিষেধও করা হয় নি। এ সম্পর্কে কোন হাদিস নেই। আল্লাহর রাসুল (সাঃ)তাঁর স্ত্রীদের নামে নিজে কুরবানীর পশু জবাই করেছেন। স্ত্রীদের দিয়ে করান নাই।তুমি কি বিয়ে করেছ ? করলে তোমার পক্ষে স্বামী করে দেবে, নইলে তোমার ভাই, বাপ, ছেলে, অথবা অন্য কেউ করবে। কেউ না থাকলে তুমি করতে পার।
প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি।আমার স্বামী বাইরে থাকে। ঈদের পরদিন বাড়িতে আসবে। ্ওইদিন কোরবানী করা যাবে কি না ? কোরবানী কয় দিন ধরে করা যায়। জানতে চায়। সাবিনা খাতুন, সাথিয়া, পাবনা।
উত্তরঃ হ্যাঁ যাবে। তিন দিন।
প্রশ্নঃআসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি। ফারাজি মুন্সি সাহেব। ঈদের শুভেচ্ছা তো দিলেন সেই সাথে ব্রাস দিলেন কেন ? এশব্দের উৎপত্তি এর অর্থ ও আসল উদ্দেশ্য কি সঠিক বুঝলাম না। শাহ আলম, ইবি, কুষ্টিয়া।
উত্তর : শাহ আলম। তুমি তো জান, মুন্সির দরবারী বন্ধ অনেক। সকলকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ঈদের শুভেচ্ছা দিতে গেলে ঈদের মাঠে গিয়ে দু’রাকাত ওয়াজিব নামায আদায় করা আর হতো না। ফলে ব্রাস মারতে হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার উৎপত্তি হলো শসস্ত্র বাহিনীতে । শক্রদের এক সাথে ক্ষমতা করতে হলে আগ্নেয় অস্ত্র দিয়ে ব্রাস ফায়ার করতে হয়। যদিও শক্রকে ক্ষতম করার জন্যে এই ব্রাস ব্যবহার করা হয় তারপরও এর একটা ভাল দিকও আছে। জেনে রাখবে দু’নিয়ায় সকল বাস্তব মধ্যে ভাল ও খারাপ দু’টোই আছে। মানুষ যদি খারাপটি ত্যাগ করে বাস্তব কল্যানটি গ্রহন করত তবে কতই না ভাল হতো। তাই ব্রাস শব্দটি ব্যবহার করে এর ভাল দিকটির প্রয়োগ করতে চেয়েছি। এই উদ্দেশেই এক সাথে সকলকে ঈদ শুভেচ্ছার ব্রাস মেরে দিয়েছি। আশা করি উত্তরটা পেয়েছ। আজকের মত এখানেই। আল্লাহ হাফেজ।
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।