সাইফ উদ্দীন আল-আজাদ
=========
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সাহসী পদক্ষেপে সাধারণ জনগণ তাকে সাধুবাদ

জানিয়েছেন মর্মে যে, আইনি জটিলতার কারণে ১০ বছর ধরে কুষ্টিয়ার ২১ বালুমহাল থেকে অস্তিত্বহীন মামলাবাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন তিনি। যার প্রেক্ষিতে কুষ্টিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগের দুই নেতাসহ ৭ জমের কাছে ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে নোটিশ দিয়েছেন রাজস্ব বিভাগ।
ইতিপূর্বে কুষ্টিয়া জেলাতে অনেক জেলা প্রশাশক এসেছিলেন কিন্তু তারা বালুমহাল নিয়ে কোন প্রকার পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। আইনি জটিলতার কারণে ১০ বছর ধরে কুষ্টিয়ার ২১ বালুমহাল ইজারা দিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। অস্তিত্বহীন এক মামলাবাজের চক্রান্তে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জেলা রাজস্ব বিভাগ বলছে, সঠিকভাবে ইজারা দিতে পারলে ১০ বছরে ২১ বালুমহাল থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টা
কা রাজস্ব আদায় করা যেত। কিন্তু আইনি জটিলতায় কোনো পদক্ষেপই নেয়া যাচ্ছে না। এদিকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের দুই নেতাসহ সাতজনের কাছে ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে নোটিশ দিয়েছেন রাজস্ব বিভাগ। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের অবহেলা অথবা আইনি জটিলতার নাম করে যোগসাজশে রাজস্ব ক্ষতির কথা নিশ্চিত করেছে রাজস্ব বিভাগ। তবে এরই মধ্যে কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে জেলার রাজস্ব বিভাগ।
৭ অক্টোবর জেলা বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব এবং রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর সাদিয়া জেরিন ক্ষতিপূরণ চেয়ে নোটিশ দিয়েছেন। নোটিশে ক্ষতিপূরণের টাকা ১০ দিনের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, জেলার ২১টি বালুমহাল থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩ লাখ ঘনফুট মোটা বালি উত্তোলন করা হয়। এর ন্যূনতম মূল্য প্রায় কোটি টাকা (প্রতি ঘনফুট ৩০-৪০ টাকা হিসাবে)। নামসর্বস্ব ও অস্তিত্বহীন মামলাবাজ আইনি জটিলতা জিইয়ে রেখে টোলের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোরশেদা
পারভিন জানান, কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলার ২১টি বালুমহালের মধ্যে ১১টি মৌজার বালুমহালের ওপর ২০১০ সালে রিট পিটিশন করেন আনোয়ারুল হক মাসুম। এরপর ২০১১, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের মধ্যে সব কয়টি বালুমহাল নিয়ে মামলা করা হয়।
অ্যাডভোকেট মোরশেদা পারভিন বলেন, সরকারের পক্ষে এসব মামলা আমরা মোকাবেলা করেছি। ২০১৯ সালে আটটি মামলায় বাদী রিট করেন, যা এখনও বিচারাধীন। অবশিষ্ট মামলাগুলোর মধ্যে অধিকাংশ রিট অকার্যকর হয়ে গেছে। সরকার চাইলে এসব বালুমহাল অনুকূলে নিতে পারে। রাজস্ব ক্ষতির কারিগর আনোয়ারুল হক মাসুমের লেটার হেড প্যাডে ব্যবহৃত ঠিকানার কোনো অস্তিত্ব সরেজমিনে পাওয়া যায়নি। কুষ্টিয়ার ৬নং পৌর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বদরুল ইসলাম বলেন, নাম-ঠিকানা সব ভুয়া এবং অস্তিত্বহীন। রাজস্ব শাখার দেয়া নোটিশ সূত্রে জানা গেছে, ১০ বছর ধরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মজমপুর, বোয়ালদাহ ও হাটহরিপুর মৌজার বালুমহাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৫৬ হাজা
র ৮২৩ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। জেলা বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নোটিশ প্রাপ্তির ১০ দিনের মধ্যে সাতজনকে ক্ষতিপূরণের টাকার সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। সাতজন হলেন- কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শম্পা মাহমুদ, হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিলন ম ল ও সাধারণ সম্পাদক হাজী আরিফ এবং আরও চারজন।হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শম্পা মাহমুদ বলেন, বালু উত্তোলনের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। হয়রানি করতেই তাকে এমন চিঠি দেয়া হয়েছে।
ভেড়ামারা বারোমাইল বালিঘাটের ব্যবসায়ী মাহবুল হক বলেন, ঘাটমালিকদের টোল দিয়ে তারা ব্যবসা করেন। ভলগেট নৌকা মালিক সাহাবুল ইসলামের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা বাহিরচর বারোমাইল ও ঘোড়ামারা তালবাড়িয়া বালিঘাট থেকে প্রতিদিন ৫০০ নৌকা থেকে গড়ে ৫০ লাখ টাকা আদায় করছেন। এসব বিষয়ে মুখ খোলা যায় না। ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস ও পুলিশ সবাই জানেন।
হান্নান ম ল জানান, ৬ কোটি টাকা দিয়ে যুগিয়া-তালবাড়িয়া ধুলটমহল ইজারা নিয়েছি। ধুলট মহলের ইজারাদার বালুমহালের টোল নিচ্ছেন কীভাবে এমন প্রশ্নের মুখে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
অ্যাডভোকেট এএসএম আকতারুজ্জামান মাসুম জানান, নাম-ঠিকানা অস্তিত্বহীন মামলাবাজ আনোয়ারুল হক মাসুম রিট পিটিশন করে বালুমহালের ইজারা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি হাজী গোলাম মহসিন জানান, নাম-ঠিকানাবিহীন মামলাবাজ ১০ বছর ধরে রাজস্ব কুক্ষিগত করলেও প্রশাসন কীভাবে এটা মেনে নিচ্ছে। আইনি জটিলতা জিইয়ে রাখার সঙ্গে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে। প্রশাসনের কারও কারও যোগসাজশ থাকতে পারে।
জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, আইনি জটিলতা থাকায় দীর্ঘদিন বালুমহালগুলো ইজারা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ওবাইদুর রহমান জানান, ২১টি বালুমহালে আইনি জটিলতা থাকায় রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়েছে।
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।